রাজধানীর ফুটপাতে ৩০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি!

রাজধানীর ফুটপাতে ৩০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি!

 

প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্থানীয় নেতা-পাতি নেতা ও পুলিশ- এই তিন চক্রের দখলে রাজধানীর ফুটপাত। সূত্র মতে, রাজধানীর ফুটপাত হকারদের কাছ থেকে মাসে ত্রিশ কোটিরও বেশি টাকা তোলে লাইনম্যানধারী চাঁদাবাজরা। ফুটপাতের দোকান থেকে দৈনিক যে পরিমাণ চাঁদা তোলা হয় সরকারি ব্যবস্থাপনায় এর সামান্য অংশ টাকা তোলা হলেও বছর শেষে সকল হকারকে পুনর্বাসন সম্ভব। জনগণের চলাচলের স্বার্থে ফুটপাতমুক্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারাও নাজেহাল হয়েছেন লাইনম্যানধারী চাঁদাবাজদের হাতে। তাদের বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন নিয়মিত মামলাও করেছে। কিন্তু প্রতিকার মেলেনি বরং আরো বেড়েছে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য।

রাজধানীর ফুটপাতে ৩০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি!

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকার রাস্তার উভয় পাশের ফুটপাত দখল হয়ে আছে অনেক আগেই। ধীরে ধীরে প্রধান রাস্তারও অনেকাংশে দোকান খুলে বসেছে হকাররা। ফুটপাত ছেড়ে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন পথচারী। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনাসহ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্দেশ দিয়েছিলেন অফিস সময়ের পর হকারদের ফুটপাতে ব্যবসা করার। কিন্তু সে নির্দেশ মানছে না হকাররা। ফুটপাতের অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করতে গিয়ে অনেক সময় হকার নামধারী নেতা ও লাইনম্যানদের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। মহানগরীতে কি পরিমাণ ফুটপাত হকার রয়েছে তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মিলে ফুটপাতে কম করে হলেও ৫০ হাজার দোকান রয়েছে। আর ফুটপাতে ব্যবসা করতে হলে চাঁদা দিতেই হয়। দোকান ভেদে এ চাঁদার হার ১শ থেকে শুরু করে ৫শ টাকা।
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন ও বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি এমএ কাশেম বলেন, দোকান প্রতি গড়ে ২শ টাকা করে চাঁদা তোলা হলেও দৈনিক ১ কোটি টাকা আদায় হয় হকারদের কাছ থেকে। সে হিসেবে মাসে দাঁড়ায় ত্রিশ কোটি। তিনি বলেন, এ চাঁদার সিকিভাগও যদি সরকারিভাবে বৈধ উপায়ে আদায় করা হয় তাহলে বছর শেষে হকারদের পুনর্বাসনে একাধিক বহুতল ভবন করা সম্ভব। তাদের পুনর্বাসনে খুব বেশি সময় লাগতো না। তাতে সরকারও রাজস্ব পাবে। বন্ধ হবে চাঁদাবাজি। নিরাপদেও ব্যবসা করতে পারবে হকার। কিন্তু লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজদের আদায় করা টাকা চলে যায় কয়েকভাগে ভাগ হয়ে। নিরীহ হকারদের ওপর চাঁদার বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। বাধ্য হন সকলেই চাঁদা দিতে।

Brand Bazaar
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ফুটপাত দখলমুক্ত করতে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু অভিযান শেষ না হতেই ফুটপাত ফেরে সেই একই চেহারায়। ডিসিসির অভিযানকালে লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজদের হাতে কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সহকারী সম্পত্তি কর্মকর্তা মুহম্মদ শামসুল আলম এসব লাইম্যান চাঁদাবাজদের নামোল্লেখ করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ডিএমপির মতিঝিল, পল্টন ও মতিঝিল থানায় নিয়মিত মামলা করেছেন। কিন্তু আসামিরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওই মামলার সূত্রমতে, গুলিস্তান আহাদ পুলিশ বক্স সংলগ্ন এলাকায় চাঁদা তোলে লম্বা হারুন, দেলু, মিন্টু, আলী মিয়া ও আব্দুুল গফুর। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে কাদের, জজ মিয়া। গাড়ি পার্কিং এলাকায় কোটন, জাহাঙ্গীর, নসু, বায়তুল মোকারম মসজিদের উত্তর গেটে সাজু, নুরু, রহিম। স্বর্ণ মার্কেটের পশ্চিম পাশে লিংক রোডে জাহাঙ্গীর। বাসসের সামনে আবুল হাসেম কবির। জিপিওর দক্ষিণ পাশে দাড়িওয়ালা বুড়া সালাম। বিবি এভিনিউ সোনালী ব্যাংক থেকে ইত্যাদি হোটেল পর্যন্ত আক্তার, জাহাঙ্গীর। ডন প্লাজার সামনে কামাল ও নজরুল। রমনা ভবনের পশ্চিম পাশে শফিক। নিউ রাজধানী হোটেল থেকে পাতাল মার্কেট পর্যন্ত শহীদ। গুলিস্তান হলের আশপাশে খোরশেদ ওরফে বড় মিয়া, কালাম, ট্রেড সেন্টারের উভয় পাশে বিমল বাবু, শওকত, হাবিব, জুতাপট্টি ভোলা ও কানা সিরাজ দতুই ভাই। জাসদ অফিসের সামনে আব্দুল হান্নান, আলমগীর, সেকান্দার হায়াত, মুরসিকুল ইসলাম শিমুল, শফিকুল ইসলাম বাবুল মঞ্জুর ময়িন, আরিফ চৌধুরী, শ্রী খোকন মজুমদার, খায়রুল বাসার, রফিকুল ইসলাম, সাত্তার মোল্লা ও আবুল হাসেম। মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলার সূত্রমতে, ফুপাতের চাঁদাবাজ আসামির তালিকায় রয়েছেÑ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনের রাস্তার চাঁদাবাজ সাইফুল ইসলাম, শিবলু, শাজাহান মৃধা, মকবুল, নুরুল ইসলাম। মতিঝিল সোনালী ব্যাংকের আশপাশের ফুটপাত চাঁদাবাজ মকবুল। রুপালী ব্যাংক এলাকায় বাবলু ও তাজুল। বিমান অফিসের সামনের ফুটপাতে নুরুল ইসলাম। বিমান অফিসের সামনে নুরুল ইসলাম। আলিকো ভবন সংলগ্ন ফুটপাতের চাঁদাবাজ ছাদেক ও আবুদর রহিম। অগ্রণী ব্যাংকের সামনে শ্রী পবন ও সাইজুদ্দিন, আবুল কালাম জুয়েল, আজাদ, কালা হাশেম, ফারুক, শহিদ রেজা বাচ্চুসহ অনেকে। শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলার সূত্রমতে, ওসমানি উদ্যান সংলগ্ন রাস্তার আশপাশে শাহজাহান ওরফে লম্বু শাহজাহান, টিএনটি থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত ইমরান, দুলমা, হিন্দু শহীদ, আইয়ুবসহ বেশ কয়েকজন। এছাড়াও গুলিস্তান, পল্টন ও শাহবাগ থানা এলাকায় লাইনম্যানের আড়ালে চাঁদাবাজির অভিযুক্তরা হলেনÑ মানিক, সাহিন, লিটন, সালেক, সেলিম, ছাত্তার মোল্লা, ইব্রাহিম ওরফে ইবু, মাইনুল সিকদার, সুলতান মিয়া, রুবেল সোহাগ, মিজান, আমিনুল ইসলাম, লম্বু সাজাহান, দাড়িওয়ালা বাচ্চু, হাসান, আব্দুস সাত্তার মোল্লা, সোনা মিয়া ও খায়রুল বাসার। আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্তরা ডিসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment